আজ শুক্রবার, ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

স্বরূপে ফিরছে হেফাজত

স্টাফ রিপোর্টার :
আবারও স্বরুপে ফিরতে শুরু করেছে হেফাজত ইসলাম। শেখ রাসেল পার্কে হামলার পর সিটি করপোরেশনের দেয়া মামলা ইস্যুতে নানা হুংকার দিয়েছেন হেফাজত ইসলামের নেতারা। একই সাথে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র আইভীকে নিয়েও করা হয়েছে নানা বিষোদগার। গতকাল বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জেলা ওলামা পরিষদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নানা হুংকার দিয়েছেন হেফাজত ইসলামের নেতারা।
জানা গেছে, সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর সাথে বেশ কয়েক বছর ধরেই হেফাজত ইসলামের নেতা মাওলানা আব্দুল আউয়াল ও মাওলানা ফেরদাউসুর রহমানের মাঝে বিরোধ রয়েছে। ইতিপূর্বে হকার ইস্যুতে নগরীর উত্তর ও দক্ষিন মেরু উত্তাল হওয়ার পরই দৃশ্যপটে এসেছিল হেফাজত ইসলামের নেতারা। বিশেষ করে, ডিআইটি মসজিদের খতিব মাওলানা আব্দুল আউয়াল ও ওলামা পরিষদের নেতা ফেরদাউসুর রহমান আইভী বিরোধীতায় সরব ছিলেন। চাষাড়ার বাগে জান্নাত মসজিদ ইস্যুতে মেয়র আইভীকে ভেঙ্গে তাকে শীতলক্ষ্যায় ভাসিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছিলো মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান। যাকে শামীম ওসমান নিজেই তার আদরের ছোট ভাই হিসেবে সম্বোধন করেছিলেন।
গতকালের সংবাদ সম্মেলনে প্রদত্ত বক্তব্যের পর ঘুরে ফিরে আবারও সামনে এসেছে সেই পুরনো দৃশ্য। হকার ইস্যু নিয়ে নারায়ণগঞ্জের আলোচিত এমপি শামীম ওসমান ও মেয়র আইভী এক টেবিলে বসার পরও পরিস্থিতি যখন ঘোলাটে, তখন আবারও দৃশ্যপটে এসেছে হেফাজত ইসলাম। পূর্বের ন্যায় আবারও মেয়র আইভীর বিরুদ্ধে চটেছেন তারা।
শেখ রাসেল পার্কে মুসল্লিদের হামলার ঘটনার পর সিটি করপোরেশনের আইন কর্মকর্তা মাওলানা ফেরদাউসুর রহমানের বিরুদ্ধে চুরির মামলা দায়ের করায় হেফাজত ইসলাম ও ওলামা পরিষদের নেতারা ক্ষোভে ফুসে উঠেছে। তারা উল্টো দাবি করছে, সিটি করপোরেশন নির্মিত নারায়ণগঞ্জ শেখ রাসেল পার্কটি মিনি পতিতালয়ে পরিণত হয়েছে।
এদিকে, ডিআইটি মসজিদের দোকান ভাঙার বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ডিআইটি মসজিদের খতিব ও হেফাজত ইসলামের নেতা মাওলানা আব্দুল আউয়াল বলেছেন, ডিআইটি মসজিদের দোকানপাট যে ভাঙতে আসবে, তাকে লাশ হয়ে ফিরে যেতে হবে। এমন হুংকারের পর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠার সম্ভাবনা দেখছেন বোদ্ধা মহল।
জানা গেছে, গতকাল সংবাদ সম্মেলন করেছে ওলামা পরিষদ। সেখানে মাওলানা আব্দুল আউয়াল বলেছেন, ‘উনি (মেয়র আইভী) খেলতে নেমেছে, ওনার পাওয়ার আছে। আমরা খেলবো আল্লাহর পাওয়ার নিয়ে। নারায়ণগঞ্জ শহরে হেফাজত ইসলামের সমাবেশ করে দেখিয়ে দিব। সারা বাংলাদেশ থেকে এখানে হেফাজত ইসলামের সমর্থকরা আসবে। মুসল্লিরা আসবে। হেফাজতকে উৎখাত করতে গেলে তুমি নিজে উৎখাত হয়ে যাবে। তুমি ভালো থাকবে না। তুমি অহংকারি হয়ে গেছ। ডিআইটি মসজিদ নিয়ে তোমার কেন মাথা ব্যথা। তুমি নারায়ণগঞ্জে আসার আগেই ডিআইটি মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ডিআইটি মসজিদের কোনো দোকান ভাঙতে আসলে লাশ হয়ে ফিরতে হবে।’
মেয়র আইভীর বিরুদ্ধে পাল্টা মামলার হুমকি দিয়ে আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘মামলা আমরাও করবো। কোর্ট তোমার বাবার একার নয়। ভালো মানুষকে মিথ্যা মামলা দিয়ে মানহানী করেছ। মামলা তোমার বিরুদ্ধে হবে।’
হেফাজত নেতা মুফতি মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘মামলা দেয়ায় ধিক্কার জানাই। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের লাগাম টানতে হবে। মেয়র হয়েছেন, আপনি সবার মেয়র। হিন্দুদের মেয়র, মুসলমানদেরও মেয়র। আপনি সাবধান হয়ে যান। আমাদের ব্যঙ্গ করবেন, উল্টাপাল্টা কথা বলবেন, তাহলে আমরা বরদাস্ত করবো না। এক সময় কাজ করেছেন। জনগণ অতিউৎসাহি হয়ে আপনাকে ভোট দিয়েছে। কিন্তু এখন তো আপনার ভোট লাগে না। কিভাবে নির্বাচন হচ্ছে, কিভাবে ক্ষমতায় আসছেন, তা জনগণ সব জানে।’
হেফাজত ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মুফতি বশির উল্লাহ বলেন, ‘ওলামা পরিষদ ও হেফাজতে ইসলাম ব্যক্তিগত ভাবে কোনো দলের বিরোধী নই। ইসলামের স্বার্থে আমরা কথা বলি। এতে কারো সুবিধা হয়, কারও অসুবিধা হয়। যাদের অসুবিধা হয়, তারা আমরাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়। নাটকের শুরু আছে, তার শেষও আছে। ২০১৩ সালে বহু মিথ্যা মামলা হয়েছে। এবারও হচ্ছে। যারা চুরি করে, তারা ভালো মানুষকে চুরির অপবাদ দেয়। সিটি করপোরেশনের আইন কর্মকর্তা মামলা দিয়েছে। তাহলে মামলা সিটি করপোরেশন করেছে। আমরা কী বলতে পারি না যে, এর সাথে মেয়রও জড়িত! এর ফলাফল ভালো হবে না। মিথ্যা মামলা দিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলতা সৃষ্টি করলে এর জন্য আমরা সবাই একাকার হয়ে প্রতিবাদ করছি। সামনে আরও বৃহৎ আন্দোলন ও প্রতিবাদ কর্মসূীচি আসতে পারে। খাজলি গোটা এখানেই শেষ করেন, না হলে চুলকাতে চুলকাতে তা বহুদূর গড়াতে পারে।’
মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান বলেন, ‘আমরা যদি প্ল্যান করে চারুকলায় যাই, আমাদের যাওয়ার আগের বাতাসেই সব তছনছ হয়ে যাবে। আমরা যদি ভাঙ্গি, তাহলে কী এগুলোর অস্তিত্ব থাকবে? এটা পুরোটাই মিনি পতিতালয় হয়ে গেছে। ডিআইটি মসজিদের পাশে এগুলো থাকতে পারবে না। আইভী রাজনৈতিক ভাবে তার জনপ্রীয়তা শূন্যের কোঠায়। নারায়ণগঞ্জের জনগণ এখন তার সাথে নাই। তাই সে আলোচনায় থাকতে কখনো অমুককে গালি দেয়, কখনো অমুককে ধরে।’
বোদ্ধা মহল বলছেন, শেখ রাসেল পার্কে হামলা এবং পরবর্তীতে মামলার পর বিষয়টি নিয়ে মুসল্লিদের মাঝে ধর্মীয় অনূূভূতি কাজে লাগানো হচ্ছে। এমন বক্তব্যের পর মুসল্লিরা উস্কে গেলে পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ। আগামীতে সিটি করপোরেশনের এই মামলা ও হেফাজতের এমন হুংকারের ফলে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়- তা ভাবিয়ে তুলছে সচেতন মহলকে।